১৯৮২ সালের ২৩ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার (থানা পরিষদ এবং থানা প্রশাসন পুনর্গঠন) অধ্যাদেশ, জারি করা হয়। অধ্যাদেশের আওতায় প্রথমে উন্নীত থানা পরিষদ গঠন করা হয় এবং থানা পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকৃত প্রশাসনিক পদ্ধতি প্রবর্তন হয়। অত:পর সংশোধনীর মাধ্যমে স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন পুনর্গঠন) অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ জারি করে। উন্নীত থানা পরিষদকে উপজেলা পরিষদে রূপ দেয়া হয় এবং থানা প্রশাসনকে উপজেলা প্রশাসন নামে অভিহিত করা হয়। অধ্যাদেশ অনুযায়ী একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান, প্রতিনিধি সদস্য, অফিসিয়াল সদস্য এবং মনোনীত সদস্য নিয়ে উপজেলা পরিষদ গঠন করা হয়। উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অফিসিয়াল সদস্য ছাড়া অন্যান্য সদস্য গণের ভোটাধিকার ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন সহ সকল বিভাগের কাজের সমন্বয় সাধন করতেন।
১৯৮২ সালে সরকারী রেজ্যুলেশন অনুযায়ী উপজেলা পর্যায়ের সরকারী কার্যাবলীকে সংরক্ষিত ও হস্তান্তরিত এ দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়। এ রেজ্যুলেশন অনুযায়ী উপজেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তরিত বিষয় সমূহের দায়িত্ব দেয়া হয় সরকার সংরক্ষিত বিষয়াদি এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক কাজের দায়িত্ব পালন করতেন। হস্তান্তরিত বিষয়সমূহ ছিল সমপ্রসারণ ও কৃষি উপকরণ সরবরাহ ও সেচের ব্যবস্থা, প্রাথমিকশিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবারপরিকল্পনা, পানীয় জলের ব্যবস্থা করা, পল্লীপূর্ত কর্মসূচী বাস্তবায়ন, সমবায় এবং সমবায় ভিত্তিক গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মসূচী সমপ্রসারণ। সংরক্ষিত কাজের তালিকা অনুযায়ী সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলার বিচার, রাজস্ব প্রশাসন এবং নিয়ন্ত্রণ, প্রয়োজনী য়দ্রব্যাদি সরবরাহ, বৃহৎশিল্প, খনন ও খনিজ উন্নয়ন ইত্যাদি দায়িত্বপালন করতেন।
পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষমতা উপজেলা পরিষদকে দেয়া হয়। দায়িত্ব পালনের জন্য উপজেলা পরিষদকে সরকার কর্তৃক বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী(এডিপি) থেকে প্রতি আর্থিক বছর অনুদান দেয়া হতো। উপজেলা পরিষদকে করারোপ ও আদায়ের ক্ষমতা দেয়া হয়। এর নিজস্ব আয়ের উৎস সমূহ ছিল, যেমন-জলমহাল,হাট-বাজার,ফেরিঘাট,ব্যবসা-বাণিজ্য ও বৃত্তির উপর কর, প্রমোদকর, ইত্যাদি। এ পদ্ধতির আওতায় হস্তান্তরিত বিষয় সমূহের কর্মকর্তাদের উপজেলা পরিষদে প্রেষণে ন্যস্ত করা হয় এবং বিধান অনুযায়ী সংরক্ষিত বিষয়াদির কর্মকর্তাদেরকে (মুন্সেফএবংম্যাজিষ্ট্রেটছাড়া) প্রয়োজনবোধে উপজেলা পরিষদের নিকট জবাবদিহি করতে হতো। এ ছাড়া ১৯৮৮ এর পূর্ব পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদের কার্যপরিচালনায় সহযোগিতা, বাজেট ও কর ধার্য প্রস্তাব অনুমোদন এবং চেয়ারম্যান, সদস্য ও সচিবদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উপজেলা পরিষদের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৯১ সালে স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন পুনর্গঠন)(রহিতকরন) অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের বিলুপ্তি ঘটে।
উপজেলা পরিষদ বিলুপ্তির পর বিগত ১৯৯৩ সালে সরকার নির্বাহী আদেশে প্রতিটি থানায় থানা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি গঠন করে। এ কমিটি সংশ্লিষ্ট থানার অন্তর্ভূক্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কতিপয় সরকারী কর্মকর্তা নিয়ে গঠিত হয়। নামের আদ্যক্ষর অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গনের মধ্য থেকে প্রতি মাসে একজন থানা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যকে কমিটির উপদেষ্টা করা হয়। কমিটির মূল কার্যপরিধির মধ্যে ছিল:(ক)উন্নয়ন কার্যক্রম ও প্রকল্পবাছাই, পর্যালোচনা ও সমন্বয় সাধন; (খ)ইউনিয়ন পরিষদকে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে উপদেশ/পরামর্শদেয়া,(গ)আন্তঃইউনিয়ন ও আন্তঃখাত সমস্যা নিরসন,(ঘ)উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদের নিকট প্রেরণ ইত্যাদি।
উপজেলা পরিষদ ব্যবস্থাকে পুনঃপ্রবর্তন করার লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে জাতীয় সংসদে উপজেলা পরিষদ আইন পাশ করা হয়। কিন্তু উপজেলা পরিষদের কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ বাতিল পূর্বক স্থানীয় সরকার(উপজেলাপরিষদ) অধ্যাদেশ, ২০০৮ জারি করে। ক্ষমতা গ্রহণের সাথে সাথে বর্তমান মহাজোট সরকার ২০০৯ সালের জানুয়ারী মাসে সমগ্র দেশব্যাপী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে। তবে জাতীয় সংসদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক জারিকৃত স্থানীয় সরকার(উপজেলাপরিষদ) অধ্যাদেশ, ২০০৮ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত ও অনুমোদিত না হওয়ায় তা বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তীতে বর্তমান জাতীয় সংসদ কর্তৃক উপজেলা পরিষদ(রহিত অধ্যাদেশ,পুন:প্রচলন ও সংশোধনী) আইন, ২০০৯প্ রণয়নের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ (১৯৯৮ সনের ২৪ নং আইন) পুন:প্রচলন করা হয়। বর্তমানে এ আইন অনুযায়ী উপজেলা পরিষদ পরিচালিত হচ্ছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস